
চুরির অপবাদে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অপবাদে হাত-পা বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে আরিফুল খান নামের এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ৪/৫ জন যুবক আরিফুলকে গাছে বেধে ২/৩ ঘন্টা নির্যাতন করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রাখে। বরবর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দমাদমা গ্রামে। নির্যাতনের শিকার আরিফুল খান (২০) দমাদমা গ্রামের উসমান খানের ছেলে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আরিফুলকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আরিফুলের স্বজনদের অভিযোগ ওয়ার্ড যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. কাওছার, ফজলুল হক, মেহেদী হাসান, রাসেল, জিয়াউর রহমান, সিরাজ উদ্দিন, ইজ্জত আলী গং তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে। এঘটনায় থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার রাতে ভাইরাল হয়েছে। এর আগে চুরির অপবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা তাকে থেমে থেমে হাত-পায়ে দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়।
আরিফুলের বড় ভাই আশরাফুল জানান, আমার ভাই আরিফুল কিছু নেশা করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই ভাই বাড়িতে কাজ করেছি। আরিফ কাজ শেষে গোসল করে বাড়িতে শুয়ে ছিলো। পার্শ্ববর্তী ডা: কাইয়ুমের প্র্র্রজেক্টের সামনে রাখা একটি গাড়ি থেকে টাকা চুরি হয়। ওয়ার্ড যুবলীগের আহŸায়ক কমিটির সদস্য কায়সারের নেতৃত্বে আমার ভাইয়ের হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
আরিফুলের মা ফরিদা খাতুন বলেন, আমার পোলারে (ছেলে) ওরা বাড়িথন নিয়া মাইরা ফালাইতে চাইছিলো। আমার পোলা তাদের হাতে পায়ে ধরেছে। তবু তারে মারছে। আমি এর বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালের দিকে আমি বাড়িতে রুটি খেয়ে ঘরে শুয়ে ছিলাম। কায়সার আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলে। আমি না গেলে বাড়ি থেকে আমাকে ধরে নিয়ে মারে। আমি চুরি করিনি। হাত জোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চাইছি। তাতে তাদের মন গলেনি। আমাকে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন শেখ জানান, আমি সন্ধ্যার দিকে জানতে পাই আরিফুলকে অভিযুক্তরা নির্যাতন করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখেছে। তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। চুরির ভিত্তিহীন অভিযোগে এভাবে মারধর করা উচিৎ হয়নি।
যুবলীগ নেতা কায়সার জানান, আরিফুল এলাকার চিহ্নিত চোর। এর আগে তার বিরুদ্ধে বহু চুরির অভিযোগ আছে। সে টাকা চুরি করেছে। তাকে মারলেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এলাকায় এসে দেখে যান। সে চোর। চোরকে ধরে কেউ আদর করে না।
প্রহলাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক আকন্দ বলেন, শুনেছি কোন এক ব্যক্তির গাড়ি থেকে টাকা চুরি হয়েছে। তবে ওই যুবক চুরির সাথে জড়িত কিনা শুনিনি। এভাবে আইন নিজের হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান বলেন, যুবককে নির্যাতনের বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জোনায়েত আকন্দ
শ্রীপুর, গাজীপুর
১৭/০৩/২০২৩