
দেলোয়ার হোসেন / রিপন হাওলাদার ঃ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ঢাকা কাস্টম হাউসের রাজস্ব ফাঁকিবাজির কলকৌশলে নিমজ্জিত প্রতারক চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। শুল্ক ফাঁকি, তথ্য গোপন করে পণ্য আমদানি, প্রতারণা, চোরাকারবারি জোর করে পণ্য খালাসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সক্রিয় তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছে একটি সিএন্ডএফ চক্র। তাদের জিম্মি দশার অপতৎপরতায় শুল্কায়নের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে কাস্টম।সিন্ডিকেট চক্রটি তাদের জাল-জালিয়াতি শুল্ক ফাঁকির একচ্ছত্র স্বঘোষিত রাজত্ব বানিয়ে নিজেদের নেতৃত্ব কায়েম করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে।চক্রটি কাস্টম হাউস ঢাকার এয়ারফ্রেইট ইউনিট এর ১ নং গেইট দিয়ে স্টিকার জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য চোরা চালান এবং মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে অবৈধ মেডিসিন, মোবাইল ফোন,সিসা ফ্লেভার, আমদানি নিষিদ্ধ পুরাতন ল্যাপটপ, নিষিদ্ধ সেক্সের ঔষধ,স্বর্ণ চোরাকারবারী সহ কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ও হুন্ডি ব্যবসা এবং আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে এলসি বাণিজ্যে তৎপর রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
চোরকারবারি ও প্রতারক চক্র শুল্ক ফাঁকি দিতে বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য দিয়ে পণ্য খালাস করতে তাদের ভাড়াকৃত সিএন্ডএফ লাইসেন্স কর্তৃক অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে সাধারণ পণ্য মিশ্রিত মালামাল দিয়ে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে কোন রকম শূল্ক কর পরিশোধ ছাড়াই স্টিকার জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য পণ্য চালানের আড়ালে উচ্চ মূল্যের পণ্য খালাস করে আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তর করেছে এমন প্রমাণাদি রয়েছে অসংখ্য।এর মধ্যে সিএন্ডএফ মাফিয়া চক্রের মূলহোতা শাজাহানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ক্রমশ বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কার্যক্রম।
এই সিন্ডিকেটের লাগামহীন অপতৎপরতা মিথ্যা ঘোষণায় অবাধ পণ্য খালাস আমদানি-রফতানির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিতে ঢাকা কাস্টম হাউসে প্রতিনিয়ত অপতৎপরতা মূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এক নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী শাহজাহান কাস্টম হাউসকে কেন্দ্র করে বহুদিন আগে প্রতারণার উদ্দেশ্যে এই শক্তিশালি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।তার পরোক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে সিন্ডিকেটের মূল কার্যক্রম। ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ জাহির করে সর্বত্র নিজের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
জাল বিল অফ এন্ট্রির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি, বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ পণ্য খালাস, বৈধ কাগজ ছাড়াই পণ্য খালাসের চেষ্টা বিভিন্ন অভিযোগসহ শুল্ক ফাঁকির অসংখ্য মামলা রয়েছে তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানসহ অন্যন্যা ভাড়াকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। তারপরও নিষ্ক্রিয় হচ্ছে না চক্রের নানা বিধ কর্মকাণ্ড। অসংখ্য বার শুল্ক ফাঁকি মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে বড় বড় চালান আটক হলেও নিয়ন্ত্রণ দাতা অনেকটা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।
তাছাড়া এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ দাতা স্বাধীনতা বিরোধী জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম এর অন্যতম অর্থ যোগান দাতা বলে কথিত রয়েছে।
সূত্র বলছে কাস্টম অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ৩২ ধারায় উল্লেখ আছে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনা হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যমূল্যের অনধিক তিন বা চার গুণ অর্থদন্ড এবং ওই পণ্য বাজেয়াপ্ত হবে। অপরাধ গুরুতর হলে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমদানিকারককে অনধিক পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেয়া যাবে। এ সিন্ডিকেটের কারোরই এখন পর্যন্ত কারাদন্ড কিংবা সর্বোচ্চ অর্থদন্ড হয়নি। আইনি জটিলতার কারণে কাস্টম ফৌজদারি মামলা না করায় ধরা পড়া চালানের সবগুলোতে জরিমানা গুণেই পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক এক স্বাক্ষাৎকারে স্বীকার করে বলেন,এই রকম চক্রটি কখনও এইচএস কোড পরিবর্তন করে কখনও জাল সনদ ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে নিচ্ছে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট শাহজাহান গংদের বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক স্টিকার জালিয়াতি ইনভয়েজ ও ডকুমেন্ট জালিয়াতির একাধিক মামলার ক্ষূদ্র বিবরণ ঃ৫৫/২০২২ তারিখ:২১-৭-২২ ইং,৫৬/২০২২ তারিখ:২২-৭-২২ ইং,৫৭/২০২২ তারিখ:২১/৭/২২ইং,৫৮/২০২২তারিখ:২১/৭/২২ইং,৫৯/২০২২ তারিখ:২১-৭-২২ইং,৬০/২০২২ তারিখ:২১-৭-২২ ইং,৬১/২০২২ তারিখ:২১-৭-২২ইং,৬২/২০২২তারিখ:২১-৭-২২ইং,৬৩/২০২২ তারিখ:২১-৭-২২ইং সহ সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে কাস্টম হাউস ঢাকার নিকট পণ্য চোরাচালানের দায়ে ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে অসংখ্য মামলা চলমান রয়েছে।এসব চলমান মামলায় ফাঁকিকৃত রাজস্বের পরিমাণ আনুমানিক ৬০ কোটির অধিক হবে বলে একটি সূত্র জানায়।চক্রটি নিয়মিত জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির কর্মকাণ্ড বলবৎ রেখেছে তার আরো একটি প্রমাণ গত ১২-২-২৩ ইং তারিখ শুল্ক ফাঁকির মামলায় জর্জরিত রাকিব ইন্টার নাশনাল নামীয় প্রতিষ্ঠানটি পূণরায় শুল্ক ফাঁকি দিতে অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য খালাসের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে চালানটি আটক হয় যাহার এআইএন নং ১০১১৫১৭২১ এলসি নং ৭২০০০০০৯৪৩২৩০১০০ । চালানটি জব্দের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হতে কমিশনার একে এম নুরুল হক আজাদ এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।