
চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানো হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে গতিশীলতা আনতে। কিন্তু এর মধ্যে যেসব ইএফডি বসানো হয়েছে, তাতে ভ্যাট আদায় হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ দোকানিরা বিক্রি ইএফডি মেশিনে এন্ট্রি না করে ভোক্তাদের রসিদ দিয়ে বিদায় করছেন। দিনে কয়েকটি বিক্রির তথ্য মেশিনে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন।
নগরীর আগ্রাবাদ ভিলেজ রেস্তোরাঁয় দেখা যায়, ইএফডি মেশিনের পরিবর্তে ভুয়া চালানপত্র দিয়ে হাতে লিখে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। কাস্টমার বিবেচনা করে আবার দোকানিরা ভ্যাট মওকুফও করে দিচ্ছেন।
ভিলেজ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা এভাবেই ভ্যাট আদায় করে থাকেন। আর নগরীর এ কে খান এলাকার কুটুমবাড়ী রেস্তোরাঁর ম্যানেজার বললেন, তাঁরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসঙ্গে নিজেরা কিছু ইএফডি মেশিনে রসিদ কাটেন এবং পরে তা ভ্যাট হিসেবে আদায় দেখান।
নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানিরা, বিশেষ করে খাবারের হোটেলগুলোতে ইএফডি ব্যবহার না করে ভোক্তাদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভ্যাট নেন এবং তাদের ভ্যাটের ভুয়া রসিদ দেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট ও কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিক্রয়কালে ইএফডি ব্যবহার না করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসঙ্গে নিজেরা কিছু ইএফডি মেশিনে রসিদ কেটে পরে তা ভ্যাট হিসেবে আদায় দেখানো আইনসংগত নয়। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার অনেক টাকা খরচ করে ভ্যাট আদায়ে ইএফডি মেশিন স্থাপন করছে, কিন্তু অসাধু দোকানিদের ফাঁকি দেওয়া রোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা করেনি। ‘এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। রাজস্ব আদায়ে দোকানিদের ইএফডি ব্যবহারে বাধ্য করা দরকার।’
আগে কাগজের রসিদে ভ্যাটের চালান দেওয়া হতো। তারপর ২০০৮ সালে যথাযথ ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছিল। তাতেও ভ্যাট ফাঁকি থামেনি। এ জন্য ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ও আদায় বাড়াতে ২০১৯ সালে ইএফডি মেশিন চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত এই ইএফডি মূলত ইসিআরের উন্নত সংস্করণ।
ইএফডি ব্যবহার করলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং ভ্যাট ফাঁকি অনেকাংশে কমে যাবে, বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভ্যাট কর্মকর্তারা বলেন, ইএফডিতে ভ্যাট আদায় খুব সহজ। তবে ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। তাঁরা যেন অবশ্যই ইএফডির চালানটি বুঝে নেন।
ইএফডি মেশিন বাধ্যতামূলক এমন ২৫ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুডের দোকান, ডেকোরেটার্স ও ক্যাটারার্স, মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব, তৈরি পোশাকের দোকান, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি-সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র, শপিং সেন্টার ও শপিং মলের সব সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ, বড় ও মাঝারি ব্যবসা (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান, যান্ত্রিক লন্ড্রি, সিনেমা হল এবং সিকিউরিটি সেবা, কমিউনিটি সেন্টার, মিষ্টান্ন ভান্ডার, স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং সোনা-রুপার দোকানদার এবং স্বর্ণ পাকাকারী, আসবাব বিক্রয় কেন্দ্র, কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস, বিউটি পারলার, হেলথ ক্লাব ও ফিটনেস সেন্টার এবং কোচিং সেন্টার।